প্রায় তিন বছর পর সিনেমায় হাত দিলেন গৌতম ঘোষ। তাও দুই দেশের যৌথ নির্মাণ!এর আগেও যৌথ উদ্যোগে সিনেমা বানিয়েছেন তিনি। তবে এবারেরটা ভিন্ন। আগে যে দুটি যৌথ সিনেমা বানানোর অভিজ্ঞতা তার আছে তা মূলত ছিলো দুটি তৈরি করা গল্পের অ্যাডাপটেশন! একটা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি, আর অন্যটা সুনীল গাঙ্গুলীর মনের মানুষ। দুটো ছবি ভারতে কেমন সাড়া ফেলেছিল তা অজানা থাকলেও বাংলাদেশে ছবি দুটো উচ্চ ও বুদ্ধিজীবী মহলে বেশ প্রশংসা পেয়েছে। ফলে গৌতম ঘোষের ছবি মানেই উচ্চ মহলে, বুদ্ধিজীবী মহলে পর্যাপ্ত গুরুত্বসহ নেয়া হয় এটা একরকম প্রতিষ্ঠিত সত্য। আর গৌতম ঘোষ নিজেও এমনটি জানেন বলেই হয়তো এবার কোনো ধরনের অ্যাডাপটেশনে না গিয়ে নিজের একটি মৌলিক অথচ ‘উদ্ভট’ ও যুক্তিহীন গল্পের একটা সিনেমা নিয়ে পরম আশাবাদী হয়ে হাজির হলেন বাংলাদেশে!
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কাঁটাতার বিষয়ক জটিলতার মত স্পর্শকাতর গল্প নিয়ে নির্মিত ‘শঙ্খচিল’ নামের সিনেমাটি বাংলাদেশের উচ্চমানের দর্শকদের খাওয়াতে পরম আশাবাদী হয়ে গত ১২ এপ্রিল গৌতম ঘোষ ঘুরে গেলেন বাংলাদেশে। সেদিন স্টার সিনেপ্লেক্সে ছবিটির প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন গৌতম ঘোষ, প্রসেনজিৎসহ বাংলাদেশের উচ্চমানের দর্শকেরা! আর সেখানেই এলিট মানুষের সাথে এলিট একটা ভাব নিয়ে দেখা ফেলা গেল ছবিটি! এবং কাকতালীয়ভাবে নির্মাতা গৌতম ঘোষের পাশে বসেই! না না, এক হল রুমের কথা বলছি না, সত্যি সত্যিই একেবারে পাশাপাশি বসে!ফলে সিনেমায় যে জায়গাগুলোকে তিনি ‘কি পয়েন্ট’ মনে করেছেন, এবং ঘাড় উল্টিয়ে হলভর্তি দর্শকদের দিকে বারবার ফিরে তাকানোর চেষ্টা করেছেন সে বিষয়গুলো বিশেষ নজর কেড়েছে।
সীমান্তে নিহত আলোচিত বাংলাদেশের মেয়ে ফেলানির মত কাঁটাতারে ঝুলে থাকা একটা লাশের দৃশ্যের মাধ্যমে শুরু হয় সিনেমা। তার আগে চোখ আটকে ছবিটি যাকে উৎসর্গ করা হয়েছে, মানে ঋত্বিক ঘটকে! যে মানুষটি ভেতর থেকে মেনে নিতে পারেননি বাংলাদেশ-ভারতের ভাঙন। দুই দেশের ভাঙন নিয়ে ঘটকের যে ক্ষত তার হৃদয়ে তৈরি হয়ে ছিল তার প্রতিটি সৃষ্টিকর্মে সেই প্রমান তিনি রেখেছেন! মেঘে ঢাকা তারা থেকে যুক্তি তক্কো গপ্পো কোথায় নেই ঋত্বিকের দেশ ভাগের রক্তাক্ত দহন!
সিনেমা দেখার আগেই প্রচুর সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে জেনেছি যে ছবিটি দেশভাগের গল্প নিয়ে নির্মিত। তারমানে ১৯৪৭ সালের সেই বুড়ো খুকোদের ভিমরুতির গল্প, আবার ইতিহাস, আবার পুরনো কাসুন্দি! কিন্তু একইসঙ্গে মনে হয়েছিল এতদিন পরে গৌতম ঘোষ কেনই বা দেশভাগ নিয়ে সিনেমা বানাবেন? দুই দেশের ভাঙন নিয়ে দীর্ঘদিন পর গৌতম ঘোষের হঠাৎ মন কেঁদে উঠার বিষয়টিকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেই সেদিন মনে মনে খারিজ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সিনেমায় যখন দেখলাম ১৯৪৭-এর ঐতিহাসিক বয়ান নয় বরং দেশভাগত্তোর সময়ের গল্প শঙ্খচিল। আরো পরিস্কার করে বলতে গেলে সাম্প্রতিক সময়ের সীমান্ত এলাকার গল্প ‘শঙ্খচিল’-এর প্রেক্ষাপট। এমন বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে গৌতম ঘোষের সিনেমা বানানোর কারণ চাইলে সিনেমা শেষে একজন বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের বাজার দখলের একটি নয়া কৌশল।’ ভদ্রলোকের এমন কথায় পাত্তা না দিলেও বছর তিনেক আগে বাংলাদেশ-কলকাতার সিনেমা আমদানি-রপ্তানি বিষয়ক কর্মকাণ্ডে গৌতম-প্রসেনজিতের দৌড়ঝাঁপও কথা মনে পড়লো। সেবার বাংলাদেশের নির্মাতা ও শিল্পগোষ্ঠির বাধায় সুবিধা করে উঠতে পারেনি গৌতম, প্রসেনজিৎ ও মমতা গং!
যাইহোক, গৌতমের শঙ্খচিলে ফিরি। মানবিক একটা গল্প বলার মধ্য দিয়ে গৌতম তার সিনেমায় ধর্ম, রাজনীতি দেখাতে যেয়ে কি একটা জগাখিচুড়ি পাকিয়ে ফেলেন। শঙ্খচিলের আগের ছবি শুণ্য অঙ্কতেও এমনটিই আমরা দেখেছি। আর এই ছবিতে জগাখিচুড়ি লাগালেন সীমান্তের মত জটিল, সংবেদনশীল ও রাজনৈতিক ছবির গল্পকে একটি মানবিক গল্প হিসেবে তুলে ধরার সরল ছেলেমানুষি করে! যার কোনো বাস্তবিক ভিত্তি নেই।
সীমান্তকে সিনেমার বিষয়বস্তু করায় গৌতম ঘোষের শক্তপোক্ত কোনো যুক্তি পুরো সিনেমায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। অন্তত আমি পায়নি। তাই নিজেই বাধ্য হয়ে শঙ্খচিল সিনেমাটাকে গত বছরে বলিউডে মুক্তি পাওয়া ‘মাঝি দ্য মাউন্টেন ম্যানের’-এর ক্রাইসিসের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করলাম! নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী অভিনীত কেতন মেহতার ওই ছবিটি যারা দেখেছেন তারা নিশ্চয় ছবিতে ‘পাহার’কে একটা ফ্যাক্ট মনে করেন। ঠিক সেই ছবির মত গৌতমের শঙ্খচিলে প্রধান বাধা দুই দেশের ‘কাঁটাতার’। মাঝি দ্য মাউন্টেন ম্যান’-এ দশরথ মাঝি বাস করতেন পাহারি প্রত্যন্ত অঞ্চলে। স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে সুখে শান্তিতেই বাস করেন তিনি। কিন্তু একদিন পাহার থেকে পরে গিয়ে মারাত্মাক আহত হন তার স্ত্রী। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। বিশাল এক পাহারের পেছনেই বড় হাসপাতাল, কিন্তু স্ত্রীকে পাহার ডিঙিয়ে নিয়ে যাওয়াতো সম্ভব না। সব ঘুরিয়ে হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা যায় তার স্ত্রী। যদি বিশাল এই পাহারটা না থাকতো তাহলে হয়তো স্ত্রীকে বাঁচানো সম্ভব হতে পারতো, এই ক্ষোভ ঝেঁকে বসে বসলে প্রায় ২২ বছর টানা পাহার কেটে রাস্তা বানিয়ে ফেলেন দশরথ মাঝি। ঠিক এমনি সেম্পটমের দেখা মেলে ‘শঙ্খচিল’-এ মুনতাসির বাদল চৌধুরী নামের এক স্কুল মাস্টারের জীবনে। দশরথ মাঝির মত তার জীবনে বাধা হয়ে আসে দুই দেশের কাঁটাতার।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে স্ত্রী আর একমাত্র মেয়ে রূপসাকে নিয়ে সুখে শান্তিতেই নদী তীরবর্তি এলাকায় বাস করেন বাদল মাস্টার। মাস্টারের সব স্বপ্ন মেয়ে রূপসাকে ঘিরেই। মেয়ের মুখের হাসির জন্য সব করতে পারেন তিনি। মেয়ে চারদিকে হাসি খুশিভাবে ঘুরে বেড়ায়। মেয়ের সমস্ত ছেলেমানুষিকেও আস্কারা দেন বাদল মাস্টার ও স্ত্রী লায়লা। এরইমধ্যে ভারতীয় সীমান্তের এক বিএসএফ সৈনিকের সঙ্গে পরিচয় হয় রূপসার। নিজের মেয়ের সঙ্গে রূপসার চেহেরার মিল থাকায় ওই জোয়ানটি তাকে মিষ্টি বলে ডাকে। এভাবেই সীমান্ত পাড়ের একটি পরিবার সুখে শান্তিতে দিন কাটাচ্ছিল। কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে রূপসা। মেয়েকে নিয়ে চরম সংকট আর ভয়াবহ প্রশ্নের সামনে পতিত হয় বাদল মাস্টার। এতটুকু মেয়ের হার্টে সমস্যা দেখা দেয়। শিগগিরই চিকিৎসা করতে হবে, তা না হলে কোনো বিপদ হয়ে যেতে পারে। বাদল মাস্টার পড়েন মহা সংকটে। ভালো চিকিৎসার জন্য এই সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে দ্রুত সময়ে খুলনা কিংবা ঢাকা শহরে যাওয়ারও সময় নেই! তাই তার স্কুলের হিন্দু প্রধান শিক্ষকের পরামর্শে খুলনা কিংবা ঢাকা নয়, তার দ্রুত সময় আর ভালো চিকিৎসার জন্য জীবনের রিস্ক নিয়ে অবৈধভাবেই সীমানা পাড়ি দিয়ে মেয়েকে নিয়ে ভারতের টাকি যায় বাদল মাস্টার ও তার স্ত্রী। যেখানে বাদল মাস্টারের বন্ধু তাদের দায়িত্ব নেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় টাকিতেও হয়ে উঠে না রূপসার চিকিৎসা। তার হার্টের বাল্ব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কলকাতায় গিয়ে অপারেশন করানো ছাড়া আর কোনো গতন্ত্যর থাকে না। সেখানে গিয়েও বাদল মাস্টার ও তার স্ত্রী পড়েন মহা সংকটে। মুসলিম ধর্মের হয়েও শুধুমাত্র মেয়ের চিকিৎসার জন্য কলকাতার সুরম্য হাসপাতালে তাদেরকে হিন্দু নাম ব্যবহার করতে দেখা যায়! এখানেও অস্তিত্বহীনতার আরোপিত সংকট দেখানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেন গৌতম ঘোষ।
ধর্ম নাহয় পরিবর্তন করে কলকাতার হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করলেন বাদল মাস্টার, কিন্তু এত টাকা কোথায় পাবেন তিনি? তারও ব্যবস্থা করেন টাকির ওই দাদু, যার ভরসায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে এসেছেন বাদল মাস্টার। ভারতীয়দের এমনসব মহানুভবতা পুরো সিনেমায় হর হামেশায় দেখা মেলে। শেষ পর্যন্ত টাকার ব্যবস্থা হলেও মারা যায় রুপসা। মেয়ের মৃত্যুর পর ব্যাপক ক্ষোভে অবৈধভাবে বাংলাদেশ পাড়ি দিয়ে আসার কথা বলে দেয় বাদল মাস্টার। ফলত তাদেরকে অবৈধ অভিবাসি আখ্যা দিয়ে ভারতীয় জেলে পুরে মেয়ে রুপসার মৃত লাশ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর রূপক হিসেবে গৌতম ঘোষ দেখান যে, বাংলাদেশ থেকে কিছু কিছু শঙ্খচিল ভারতের সীমানায় উড়ে যাচ্ছে…
মূলত ছবির গল্প এতুটুকু। কিন্তু এই গল্প দিয়ে গৌতম ঘোষ কি বুঝাতে চাইলেন আসলে? সীমানা তুলে দেয়ার গল্প বললেন? মানবিকতার গল্প বললেন? নাকি এই ছবির বাদল মাস্টারের মধ্য দিয়ে তিনি বলতে চাইলেন, ১৯৪৭ সালের দেশভাগের জন্য হাহাকারটা শুধুই বাংলাদেশের মানুষের! ভারতের মানুষ আনন্দে আছে, ওইখানে মেলা হয়, উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে, সেখানের মানুষগুলো মহানুভবতায় ঠাসা, এইসব? পুরো সিনেমাতেইতো এমন দাদাগিরিটা টিকিয়ে রাখলেন গৌতম ঘোষ? এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিতে অসংখ্য বাংলাদেশির মৃত্যুর বিষয়টিকেও পা মাড়িয়ে গেলেন তিনি।
এই যেমন, সিনেমার প্রথমেই ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের গুলিতে যে বাংলাদেশির মৃত্যু হয় তার খুনের দায় বিএসএফ নিজের ঘাড়ে না নিয়ে বরং ইতিহাসের উপর চাপিয়ে দিয়ে সাফাই গাইতে শুনি। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা যখন খুনের দায় কার? কিংবা সীমান্ত হত্যার দায়তো ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদেরই বলে জিজ্ঞেস করেন, তখন সীমান্ত প্রধানকে আমরা বলতে শুনি ‘এই খুনের দায় কোনো ভারতীয় সীমান্তরক্ষীর না, বরং ব্লাডি হিস্টোরি’র!’
আহা, কতো চমৎকার উত্তর এই উচ্চপদস্ত কর্মকরতার! একেরপর এক ফেলানীর মত মানুষকে হত্যা করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখবে ভারতীয় জোয়ানরা, আর তাদের উচ্চপদস্ত কর্মকর্তাদের এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে ক্ষোভ দেখিয়ে ইতিহাসকে গালাগাল করে চুপ মেরে যাবেন! কি হাস্যকর, আর মর্মান্তিক যুক্তি! বাস্তবেও কি তাহলে প্রত্যেকটা বাঙালির সীমান্ত দিতে গিয়ে খুন হওয়ার ক্ষেত্রে ভারতীয় কর্মকর্তারা এমনই ইতিহাসের উপর দায় চাপিয়ে দিয়েছেন, বা দিচ্ছেন?
হ্যাঁ। এই দেশের মানুষের চেয়ে হয়তো ভারতের মানুষ রাষ্ট্রীয়ভাবে সুযোগ সুবিধা বেশি পায়। ফলে বাংলাদেশের সীমান্তের মানুষগুলোর মধ্যে হয়তো কেউ কেউ একটু স্বাচ্ছন্দ্যের আশায় জীবনকে মুঠোবন্দি করে রাতের অন্ধকারে ভারত পাড়ি দিতে চায়। কিন্তু সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের নির্বিচারে গুলি করে মেরে ফেলানোর ঘটনায় কোনো রকমের তোয়াক্কা না করে, জবাবদিহিতার ধার না ধেরে বরং উল্টো সেইসব সীমান্তের খুনকে বৈধতা দেয়ার জন্য গৌতম ঘোষের মত নির্মাতারা সিনেমাকে ব্যবহার করতে পারেন না। এটা অন্যায়। এসব স্পর্শ কাতর বিষয় নিয়ে এমন সরল ছেলেখেলা বড়ই নির্মম। অন্তত আমাদের জন্য।
বাংলাদেশের দর্শকদের খুশি করার জন্য কলকাতার ভালো মন্দ দুই শ্রেণির মানুষকে দেখানোর মত হাস্যকর ব্যালেন্সও করেছেন গৌতম ঘোষ। এই যেমন কলাকাতায় মেয়ে রূপসার চিকিৎসা বাবদ ব্যয়ের জন্য বাদল মাস্টার তার স্ত্রীর গয়না বিক্রি করার টাকা যখন এক ধান্দাবাজ ভাগিয়ে নিতে চাইল সেই মুহূর্তটি, এবং কিছু মানুষ পরম মমতায় কলকাতার রাস্তা থেকে তাদের উদ্ধার করলো। এবং অপ্রাসঙ্গিকভাবে কলকাতার রাতের রাস্তায়ও হোন্ডাওয়ালা তরুণদের দৌরাত্ম দেখানোর শটটি একেবারেই বেমানান ছিল।
কিছু দৃশ্যমান অসঙ্গতি ছিল, যা চোখে বেশ দৃষ্টিকটু। এই যেমন পুরো সিনেমায় দর্শক জেনে এসেছে ভারত-বাংলাদেশের সীমানায় শুধু কাঁটাতার দিয়ে বিভাজন। রূপসাকে (সাঁঝবাতি) মাঝে মধ্যে দেখাও গেছে কাঁটাতারের ফাঁকা দিয়ে ভারতীয় সেই জোয়ানের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু মূল সংকটটা যখন সিনেমায় শুরু হলো, মানে অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে রূপসার চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছিলেন বাদল মাস্টার ও তার স্ত্রী, তখন দেখা যায় দুই দেশের সীমানা মানে মাঝখান দিয়ে একটা নদী!
পুরো ছবিতে অভিনয়ে সবাই নিজেদের সেরাটাই দিয়েছেন বলে মনে হয়। যদিও রূপসা চরিত্রে সাঁঝবাতির অভিনয়ই বেশি প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু আমার মনে হয়, প্রত্যেকের অভিনয় ইন্টেনশনাল একটা সিনেমার প্রেক্ষাপটের কাছে ম্লান হয়ে গেল! এক ধরনের আরোপিত ট্রাজেডি সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সিনেমার সমাপ্তির চেষ্টাও তাই বৃথা গেল।
দুটো বন্ধুভাবাপন্ন দেশের সীমানা, প্রাচীর, কাঁটাতার তুলে দেয়ার মহান ব্রত নিয়ে রোমান্টিসিজমের মাধ্যমে ফ্যান্টাসাইজ করে শঙ্খচিলে মানবিক গল্প পরিবেশন করার যে কৌশল তিনি ব্যবহার করেছেন তার সিনেমায় তা ইতিমধ্যে অন্তত বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে যথেষ্ঠ হাস্যখোরাকের জন্ম দিয়েছে। তাই খুব সরলভাবেই বলা যায়, সীমানা নিয়ে ঋত্বিক ঘটকের যে ক্ষত আর গৌতম ঘোষের যে ইন্টেনশন তা এক নয়। দুই দেশের ভাঙন নিয়ে ঋত্বিকের হৃদয়ের ক্ষত শুধুমাত্র গৌতমের মত আলগা আবেগ দিয়ে মোড়ানো নয়। গৌতম ঘোষ ভালো নির্মাতা। কিন্তু সেই ভালো নির্মাতার প্রশংসাটা তিনি কালবেলা, পদ্মা নদীর মাঝি কিংবা মনের মানুষের জন্য পাইতে পারেন, শঙ্খচিলের জন্য নয়।