নতুন চোখে পথের পাঁচালী দেখা/রুহুল মাহফুজ জয়

১৯৫৫ সালের ২৬ আগস্ট। কলকাতা ও শহরতলীর নয়টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল একটি ছবি।এ ছবির শুটিং শুরু হয় ১৯৫২ সালের ২৭ অক্টোবর। সত্যজিৎ রায়ের প্রথম ছবি। পথের পাঁচালী। বাংলা সিনেমা তো বটেই, যে ছবি মুক্তির পর বদলে যায় ভারতীয় উপমহাদেশের সিনেমার ভাষা। যে ছবি মুক্তির পর থেকেই পৃথিবীব্যাপী নবীন চলচ্চিত্র পরিচালকদের স্বপ্নের প্রেরণা।৭০ হাজার টাকা বাজেটের পথের পাঁচালী পা দিলো ষাট বছরে। আমেরিকা মুলুকে ফোরকে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছবিটার প্রিন্ট সংস্কার হয়েছে সম্প্রতি।

দূর্গা ও অপুর বাবা হরিহর চরিত্রে অভিনয় করা কানু ব্যানার্জি আর দু:সম্পর্কের পিসি ইন্দির ঠাকরুণের চরিত্রে অনবদ্য অভিনেত্রী চুনিবালা দেবীর জন্য বোড়াল গ্রামে যে মাটির বাড়ি আর উঠান ভাড়া নেয়া হয়, তার জন্য শুটিং ইউনিটকে মাসিক ভাড়া দিতে হয়েছে পঞ্চাশ টাকা। চুনিবালা দেবীর রোজ পারিশ্রমিক ছিল ২০ টাকা। অপু চরিত্রের সুবীর বন্দোপাধ্যায়কে আনুষ্ঠানিক পারিশ্রমিক দেয়া হয়নি। শুটিং শেষে সুবীরের বাবার হাতে সত্যজিৎ রায় ২৫০ টাকা গুঁজে দিয়েছিলেন।ছবি মক্তির পর এই মানুষগুলোই বিশ্ব চলচ্চিত্রের অমর মুখ।

পথের পাঁচালী নিয়ে লিখতে বসে আসলে ভাষাহীনতায় ভুগছি। অতিমুগ্ধতা আর অতিপ্রেম মনে হয় প্রেমিক-প্রেমিকা। পুরা লায়লা-মজনু টাইপ। এই দুইটা বিষয় মেটাফিজিক্যাল জগত থেকে মানুষকে একটা স্ট্যাটিক জগতের সামনে দাঁড় করায়ে দেয়। তা কিছুক্ষণের জন্য হলেও। আর পথের পাঁচালী সিনেমার দর্শককে এই অভিজ্ঞতা দিচ্ছে গত ষাট বছর ধরে। দিচ্ছেন সত্যজিৎ রায়।

সম্প্রতি ছবিটা আবার দেখলাম। আবারও বাংলা সিনেমার ‘মাণিক’কে সিন ধরে ধরে প্রণাম দিলাম মনে মনে। পথের পাঁচালী যতবারই দেখি, কম করে হলেও নিজের শৈশবের নব্বই শতাংশ সিনামেটিক ইমেজে দেখতে পাই। নমস্কার সত্যজিৎ রায়…নমস্কার বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়।

পথের পাঁচালী ছবিটা শুরুর তৃতীয় দৃশ্যেই আমি নিজের শৈশবে ফিরে যাই। ছোট্ট দূর্গা বাঁশবাগানের ভেতর দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে,তার ভেতর একটা লুকোচুরি ভাব—এই দৃশ্য থেকে যতবার ওই বাঁশবাগানের ভেতর দিয়ে দূর্গা আর অপু চলাচল করেছে (হোক দৌড়ে বা হেঁটে), ততবারই মনে হয়েছে ওরা আমার ছোটফুপি আর ছোটকাকা। দূর্গার মুখায়বে আমি মাঝেমাঝে পারু খালার মুখটাও বসায়ে দেই। সেই কৌতুহলী চোখে, সেই চঞ্চলতা, সেই ডুরে শাড়ি। অপু কখনও কখনও আমার ছোটকাকা, কখনও আমি নিজেই।

সুব্রত মিত্রের ক্যামেরার কাজ, পণ্ডিত রবিশঙ্করের মিউজিক পথের পাঁচালীকে অন্যমাত্রা দিয়েছে। ছোট থেকে বড়, পথের পাঁচালী ছবির প্রতিটি চরিত্রের ডিটেল অসাধারণ। মোটাসোটা ভুড়িওয়ালা মিঠাই বিক্রেতা বা পাঠশালার পণ্ডিত—স্ক্রিনে জায়গা পেয়েছেন দু’একবার। কিন্তু তাদের চরিত্র ভুলবার নয়। এমনকী ছবির কুকুর-বিড়ালগুলোও না।

দূর্গা, অপু আর সর্বজয়া— দুই ভাই-বোন ও তাদের মা পথের পাঁচালীর মূল চরিত্র। কখনও কখনও আমার কাছে মনে হয়েছে, এই তিনজনকে ছাপিয়ে গেছেন বৃদ্ধা ইন্দির ঠাকরুণ। মনে হয় এই চরিত্রটাই পথের পাঁচালীর সবচে শক্তিশালী চরিত্র। এই ছবিতে অভিনয় করা কাউকেই মনে হয়নি অভিনয় করেছেন। কিন্তু চুনিবালা দেবীর জন্ম আর ৮৩ বছরের জীবনপ্রাপ্তি যেন পথের পাঁচালীর ‘ইন্দির ঠাকরুণ’ হবার জন্যই। ছবিটা যে বছর মুক্তি পায়, সে বছরই মারা যান চুনিবালা। বিশ্ব সিনেমার সৌভাগ্য,এমন একজন অভিনেত্রীকে সত্যজিৎ রায় খুঁজে বের করেছিলেন। সিনেমাপ্রেমীদের কাছে পথের পাঁচালী যেমন আজও প্রিয়,তেমনি মৃত্যুর ৬০ বছর পরেও চুনিবালা দেবী বেঁচে আছেন। তবে চুনিবালা হিসাবে নন, ইন্দির ঠাকরুণ পরিচয়ে। এখানেই নির্মাতা সত্যজিৎ বা অভিনেত্রী চুনিবালার সার্থকতা। এ ছবিতে অভিনয় করা অনেকেই পরে আর পর্দায় আসেননি, কিন্তু তারা অভিনেতা-অভিনেত্রী হিসাবে জগৎখ্যাত। তা পথের পাঁচালীর সৌজন্যে।

পথের পাঁচালীতে ধনী-নির্ধন, ক্ষুধা আর সুখের মধ্যবর্তী যে সংকট, তার পুরোধা বৃদ্ধা ইন্দির। তার গপগপ করে ভাত খাওয়া এবং সেদিকে তাকিয়ে ছোট্ট দূর্গার ঢেঁকুর তোলার যে দৃশ্য, তার ভেতর দিয়ে আমরা দেখতে পাই ক্ষুধার সরলীকরণ। সংবেদনশীলতা। আশি বছর বয়সী একজন মানুষের জন্য ক্ষুধা যেরকম, সাত-আট বছর বয়সীর জন্যও ঠিক সেরকমই।

নুন আনতে পানতা ফুরানো হরিহর-সর্বজয়ার সংসারে দুই সন্তানের মৌলিক চাহিদা পূরণ হয় না ঠিকমতো। সেখানে ইন্দির এক প্রকার বোঝা। বৃদ্ধা তা বোঝেন এবং মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। এখানে অসহায় ইন্দির ঠাকরুণের প্রতিবেশ-পরিস্থির সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার যে সংগ্রাম, তা আশ্রয়হীন মানুষের চিরায়ত। ইন্দিরের হাঁটা-চলা, অসহায় তাকিয়ে থাকা যেন মৃত্যুমুখী মানবতার চিত্র।

দূর্গা-অপুকে ঘুম পাড়ানোর জন্য রাত্তিরে ইন্দির ঠাকরুণের গল্প বলার দৃশ্যটা একবার মনে করে দেখুন। কি চমৎকার সিনেমাটিক ইমেজের সৃষ্টি! তিনি রাক্ষস-খোক্কসের গল্প বলছেন। দেয়ালে ইন্দিরের মুখের অবয়বটা এমনভাবে দৃশ্যায়ন করা হয়েছে যে, ওই ছায়াটাই যেন রাক্ষস! ছবিতে ইন্দির ঠাকরুণের কণ্ঠে একটা গান আছে, “যারা পরে এলো, আগে গেলো, আমি রইলাম পড়ে… ওরে দিন যে গেলো, সন্ধ্যে হলো, পাড় করো আমারে”। কোন বাংলা সিনেমায় চরিত্রের সঙ্গে গানের এমন যুক্তিযুক্ত ব্যবহার আর কি হয়েছে? মনে করতে পারছি না।

সর্বজয়া ইন্দির ঠাকরুণকে রাখতে চান না নিজেদের বাড়িতে। চলে গেলেই খুশি হন। দুবার তাড়িয়েও দিয়েছেন। আবার সম্মানহানির ভয়ে আশ্রয়ও দেন। সর্বজয়ার এই সাইকোলজিক্যাল টানাপোড়েন এক কথায় অসাধারণ। আমার মতে, পথের পাঁচালী ছবির বড় সম্পদ। আশ্রয়হীন ইন্দির শেষবার যখন বাপের ভিটায় ফিরে এলো, তার চোখে-মুখে ছিলো মৃত্যুছায়া। তাকে জলপান করিয়ে বিদায় দিলো সর্বজয়া। যে বারান্দায় শুয়ে ইন্দির ঘুমাতো, সেখান একটি কুকুর খেলছে। ওদিকে তাকিয়ে সদর দরজা পার হয়ে যাচ্ছেন তিনি। এই দৃশ্যের মাধ্যমে সত্যজিৎ রায় হয়তো সেই বার্তাটিই দিয়েছেন— কুকুর-বিড়ালের আশ্রয় আছে, দু বেলা খাবার আছে, মানুষের কাছে তবু মানুষেরই ঠাঁই নেই। পুঁজিবাদী মানসিকতা শুধু যে বিত্তশালীদের মধ্যেই থাকে, তা না। নুন আনতে পানতা ফুরায় টাইপের পরিবারে ‘বিলং’ করা মানুষের মধ্যেও তা লুকিয়ে থাকে। এমনকী নারীদের মধ্যেও। সর্বজয়া আর ইন্দির ঠাকরুণের মধ্যে টানাপোড়েন তার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে।

ইন্দিরের মৃত্যুদৃশ্যটা করুণ। সেই মৃত্যুদৃশ্যের আগে বাঁশবাগানে বসে বৃদ্ধার ঠিকানাহীনতা বা আশ্রয়হীনতার রিক্ত চাহনি দর্শকের বুকে হাহাকার তৈরি করে; সর্বজয়ার প্রতি কিছুটা হলেও ঘৃণা। ইন্দির ঠাকরুণের করুণ মৃত্যুর জন্য হয়তো অনেক দর্শক সর্বজয়াকে ক্ষমাও করেনি। যদিও ইন্দিরের মৃত্যু ঢেকে গেছে দূর্গার মৃত্যুতে। বৃদ্ধা পিসির অসহায়ত্বকে ছাপিয়ে গেছে জ্বরের ঘোরে কিশোরী ভাইজির ছোট ভাইকে বলা, “এবার জ্বর ছাড়লে রেলগাড়ি দেখতে যাবো রে”। দূর্গার আরেকবার রেলগাড়ি দেখা হয় না। জ্বরে দূর্গার মৃত্যু, অসহায়ত্বে সর্বজয়ার কান্না দর্শক হৃদয়ে এক চিরহাহাকারের জন্ম দেয়। যে হাহাকারের স্রোতে ভেসে যায় ইন্দির ঠাকরুণের করুণ জীবন ও মৃত্যু। একটা নতুন বড় দু:খ, চারপাশের আর সব ছোট-বড় দু:খকে এভাবেই গ্রাস করে ফেলে সবসময়।

তারও আগে-পরে পুরো ছবি জুড়ে দর্শকরা দেখে দুই ভাই-বোনের দূরন্ত কৈশোর। বাঙালি দরিদ্র পরিবারের শিশু-কিশোরদের শৈশব-কৈশোর যে বিত্তশালী পরিবারের সন্তানদের চেয়ে অনেক বেশি দূরন্ত আর দু:সাহসিক হয়, পথের পাঁচালী যেন তারও ছায়াচিত্র। আমরা দেখি, মিঠাইওয়ালার পিছু পিছু ছুটছে অপু, দূর্গা আর তাদের কুকুর। লং শটে পথের পাশে পুকুরের পানিতে তাদের চলমান প্রতিবিম্ব। সে এক দৃশ্য বটে!

বাঁশবনে চড়ুইভাতিতে স্বাভাবিক কৈশোরের দুরন্তপনার পর আমরা দেখি, সমবয়সী সখীর বিয়ের আসরে দূর্গার চোখে জল। পয়সাওয়ালা পরিবারের মেয়ে হলে তারও যে এতদিনে বিয়ে হতো, সেই ভাবনাতেই হয়তো এই কষ্ট। যা সইতে না পেরে চোখের কোনে জল হয়ে ঝরে পড়েছে। নিজের বিয়ের জন্য দূর্গাকে খেলার ছলে শ্লোক পড়তেও দেখে দর্শক। ছবির বেশ কিছু দৃশ্যেই দূর্গা চরিত্রের মাধ্যমে যৌবনোন্মুখ সময়ে মেয়েদের অস্থিরতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

আমার আট-দশ বছর বয়সে যখন আমাদের গাঁয়ে প্রথম বিদ্যুত এলো, মুরব্বীদের নিষেধ সত্বেও বিদ্যুতের খুঁটিতে কান পাততাম। ঝিম মারা একটা শব্দ আর কম্পন পাওয়া যেতো তাতে। সেই ঘটনা নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ের। তখন থেকে চল্লিশ বছর আগেই যে এই দৃশ্য পথের পাঁচালীতে ধারণ হয়েছে, তা জানাই ছিলো না। কাশবন পেরিয়ে অপু-দূর্গার প্রথম ট্রেন দেখার মুহূর্তটা বিশ্ব সিনেমার কালজয়ী একটা মুহূর্ত বা দৃশ্য হয়ে আছে। ট্রেন দেখাটাও যে একটা বড় মোহ, বাঙালির ছোটবেলার চেয়ে তা কে আর ভালো জানে!দূর্গা-অপুর বৃষ্টিতে ভেজার মতো দৃশ্যকাব্য আর কটা ছবিতে আছে, এতটা আবেদন নিয়ে! যদিও সেই বৃষ্টি বিরাট এক ট্র্যাজেডির কারণ।

পথের পাঁচালীর শেষ দৃশ্যে আমরা দেখি,স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে কাশী চলে যাচ্ছেন হরিহর; জীবনের বাঁক বদলের আশায়। এই যাত্রা আসলে পুঁজিবাদী সমাজের বিকাশে গ্রামীণ জীবন থেকে শহুরে জীবনে প্রবেশযাত্রা। যে যাত্রার বিকাশ স্পষ্টত ‘অপরাজিত’ হয়ে ‘অপুর সংসার’ ছবিতে গিয়ে থেমেছে। গ্রামের একটা সাধারণ পরিবারের ছেলে ‘অপু’ কিভাবে আধুনিক, শিক্ষিত সমাজের প্রতিনিধি হয়ে ওঠে, তা জানতে হলে দর্শককে ‘অপু ট্রিলজি’ দেখতে হবে। যার শুরুটা ‘পথের পাঁচালী’ দিয়ে।

দুনিয়ার হোমড়াচোমড়া ব্যক্তি থেকে একদম সাধারণ দর্শক, সবার কাছে ‘পথের পাঁচালী’ কেন প্রিয় সিনেমা হয়ে উঠলো? তা ভাবতে গিয়ে যে উত্তর পেলাম, তা এরকম— সেলুলয়েডে সত্যজিৎ রায়ের গল্প বলার সততা, অর্থাৎ ঔপন্যাসিক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের লেখা আর পরিচালক সত্যজিৎ’র সিনেমাটিক ইমেজের রসায়নটা এমন খাপে খাপ হয়েছে যে, পথের পাঁচালী হয়ে উঠেছে ‘বাঙালিত্ব’ আর বাঙলা জনপদের সত্যিকারের ছবি। যা হাজার বছরের। অপু-দূর্গা পথের পাঁচালী সৃষ্টির আগেও ছিলো, বিভূতির সময়ে ছিলো, সত্যজিৎ’র সময়ে ছিল, আছে এখনও।

দরিদ্রতা যে সকল বাঙালির ঘরে ছিল বা আছে, পথের পাঁচালীর অপু-দূর্গা আর তার পরিবারের ছবিটা সেখানে চিরকালীন। কিশোরী দূর্গার মানসিক টানাপোড়েন, আনন্দ-বিষাদ গাঁয়ের কোন বাঙালি কিশোরীর নেই? প্রাচ্য, পাশ্চাত্য বা ল্যাটিন, সকল সমাজেই তো কৈশোরের দূরন্তপনা একই রকম হবার কথা। আর্থ-সামাজিক যে বক্তব্য পথের পাঁচালীতে তুলে ধরা হয়েছে, তা যেমন আমেরিকাতে আছে; আছে সুদান, নিকারাগুয়া বা আর্হেন্তিনাতেও। সারা পৃথিবী জুড়েই আসলে কৈশোর আর দারিদ্রের ভাষা এক। পথের পাঁচালী তাই একেবারে সাধারণ মানুষ থেকে দুঁদে, সবারই ছবি।পথের পাঁচালী বুঝলে আসলে বাঙালির মন বোঝা যায়, যা আবহমান।

 

One comment on “নতুন চোখে পথের পাঁচালী দেখা/রুহুল মাহফুজ জয়

  1. Nishat says:

    দুর্দান্ত একটি বিশ্লেষণ।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s